ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠির রাজাপুরের হাইলাকাঠি গ্রামে শ্বাসরোধে স্ত্রী আইরিন আক্তার কবিতাকে (২০) হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় স্বামী রিয়াজ হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে ৯টার দিকে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহত কবিতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে শুক্রবার সকালে মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ তুললে স্বামী মিরাজ হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক করা হয়েছে। পরে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়, উপজেলার হাইলাকাঠি গ্রামের ছালাম হোসেনের ছেলে মিরাজ হোসেন পেশায় একজন শ্রমিক এবং নিহত আইরিন আক্তার কবিতা উপজেলার হাইলাকাঠি গ্রামের ইউনুস ভূঁইয়ার মেয়ে। তাদের সাত মাস বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে। কবিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করলেও কবিতার বাবার পরিবার ও স্বজনরা বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। তাদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে প্রায়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন কবিতাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে পারিবারিক কলহের কারণে তাকে স্বামী মিরাজ হাওলাদার শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় নিহতের শাশুড়ি জাহানুর বেগম সাথে ছিলেন। নিহতের শাশুড়ি জাহানুর বেগম জানান, দুপুরে খাওয়ার পর ছেলে ও ছেলের বউ তাদের নিজেদের রুমে শুয়ে পড়ে ও সাত মাস বয়সী নাতনি মাহিমাকে নিয়ে তার ছোট ছেলে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে শিশু মাহিমা কান্না শুরু করলে তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় কবিতাকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে শিশুটির বাবা মিরাজকে খবর দেয়া হয়। পরে কবিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। কবিতার মৃত্যুতে হাসপাতালে শোকার্ত স্বজনদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নিহত আইরিন আক্তার কবিতা ও তা স্বামী সন্তান নিয়ে শশুরবাড়িতে একই ঘরের মধ্যে আলাদা বসবাস করত।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল খায়ের মাহমুদ বলেন, রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। নিহতের বাবা ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আজ বিকেলে আইরিন অসুস্থ হয়ে পড়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় আইরিনকে সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে চিকিৎসক আইরিনকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কী অসুস্থতা ছিল বা কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারিনি। আইরিনের সাথে স্বামীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাই ধারণা করছি এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না। আইরিনকে হত্যা করা হয়েছে। রাজাপুর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, নিহতের বাবা ইউনুস ভূঁইয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ওই নারীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে ও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply